Sunday, July 30, 2023

তায়েফ ভ্রমন (পর্ব - ১) : তায়েফ শহর, মীকাত মসজিদ এবং অন্যান্য স্থাপনা জিয়ারত...

তায়েফ শহর, মসজিদ আল হারাম বা ক্বাবা শরীফ থেকে ৯০ কিলোমিটার পূর্ব দিকে অবস্থিত। এই শহরটি হাদা পর্বতের উপর অবস্থিত, যা প্রায় ভূপৃষ্ঠ থেকে ১৮৭৯ মিটার বা ৬১৫০ ফিটেরও উপর উচ্চতায়। তায়েফ শহরটি খুবই পরিপাটি, গোছানো, পরিচ্ছন্ন, সবুজ প্রকৃতিময়, সুদর্শন স্থাপনা, উদ্যান ইত্যাদি সহ একটি নয়নাভিরাম শহর। এখানকার আবহাওয়া খুবই চমৎকার এবং সহনশীল। এখানকার তাপমাত্রা ১০~১২ ডিগ্রি থেকে ২৮~৩০ ডিগ্রি পর্যন্ত ওঠানামা করে। এখানে প্রচুর পরিমাণ আঙ্গুর, তরমুজ, চেরি, বাঙ্গি ইত্যাদি ফল উৎপাদিত হয় এবং খুবই সুস্বাদু। তুলনামূলক খুবই সস্তায় পাওয়া যায়। 

তায়েফে যাওয়ার দুটি রাস্তা, হয় বাসে করে অথবা ট্যাক্সি বা ছোট গাড়ি করে। বাসে বা বড় গাড়িগুলোতে গেলে আপনারা পাহাড়ে উঠার দৃশ্য অবলোকন করতে পারবেন না। ট্যাক্সি বা ছোট গাড়িতে গেলে আপনি পাহাড়ের আঁকাবাঁকা পথ বেয়ে উপরে ওঠার নয়নাভিরাম দৃশ্য উপভোগ করতে পারবেন। 

তায়েফের অন্যতম একটি আকর্ষণ হচ্ছে "তায়েফ কেবল কার" বা "টেলিফ্রিক আল হাদা" যা আল হাদা কার রিসোর্টে অবস্থিত। এটি আল হাদা রিং রোড, আল হাদা, তায়েফ-এ অবস্থিত। ক্যাবল কারটি ১৫৫০ মিটারের বেশি দূরত্বে বিস্তৃত। রাইডটি সম্পূর্ণ করতে মোট সময় লাগে প্রায় ১৫ মিনিট যা সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্যের অপূর্ব সৌন্দর্য প্রদান করে। শীর্ষে যাওয়ার পথে পর্যটকরা শুভ্র প্রাসাদ, আল হাদা পর্বত, তায়েফ গোলাপের বাগান এবং আরও অনেক কিছুর দর্শনীয় দৃশ্য উপভোগ করতে পারবেন। একটি টিকিটের মূল্য প্রায় ৮৪ সৌদি রিয়াল, যা সময়ে সময়ে পরিবর্তিত হতে পারে। এটি সকাল ৯ টা থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত খোলা থাকে।

এই তায়েফে চারটি গুরুত্বপূর্ণ মীকাতের মধ্যে একটি অবস্থিত যার নাম "করণ-আল মানাজিল"। এই মীকাতের মসজিদ থেকে ইহরাম বেঁধে আপনারা হজ্জ বা উমরাহ পালন করতে পারবেন।

উহুদ পর্বতের উপত্যকায় উহুদ যুদ্ধের প্রান্তর এবং শাহাদাত বরণকারী সাহাবীদের কবরস্থান জিয়ারত...

উহুদের যুদ্ধ ইসলামের ইতিহাসে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি যুদ্ধ যা শনিবার, ৭ই শাওয়াল ৩ হিজরি বা ২৩ মার্চ ৬২৫ খ্রিস্টাব্দে মদিনার কাছে উহুদ পর্বতের উত্তরে একটি উপত্যকায় সংঘটিত হয়েছিল।

উহুদ যুদ্ধের প্রাথমিক পর্যায়ে মুসলমানদের বিজয় নিকটবর্তী বলে মনে হয়েছিল এবং কুরাইশ অগ্রগামীরা তাদের শিবিরগুলোকে অরক্ষিত রেখে পিছু হটতে শুরু করেছিল। ঠিক তখনই মুসলমানদের একটি বাহিনী, যাদেরকে একটি সম্ভাব্য ঘেরাও থেকে রক্ষা করার জন্য একটি পাহাড় রক্ষার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, তারা পলায়নকারী শত্রুর রেখে যাওয়া গনিমতের মালামাল সংগ্রহের জন্য তাদের অবস্থান ত্যাগ করেছিল।  ঘটনার এই পালাটি কুরাইশ জেনারেল খালিদ ইবনে আল-ওয়ালিদ দ্বারা পূণঃ-আক্রমণ সংঘটিত হয়েছিল, যিনি অরক্ষিত পিছনে একটি সাহসী অশ্বারোহী স্ট্রাইক শুরু করেছিলেন এবং মুসলমানদের ঘিরে ফেলেছিলেন, যা যুদ্ধের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল। এই যুদ্ধে প্রায় ৭০ জন সাহাবী শাহাদাত বরণ করেছিলেন, যার মধ্যে আমির হামজা (রাঃ), মুসাব বিন উমায়ের (রাঃ) ও আব্দুল্লাহ বিন জশ (রাঃ) এর মধ্যে বিখ্যাত সাহাবীরাও ছিলেন। আমাদের নবীজি নিজেও আহত হয়েছিলেন।

যুদ্ধটিকে মুসলমানদের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য ধাক্কা বা পরীক্ষা এবং কুরাইশদের জন্য একটি ছোট বিজয় হিসাবে দেখা হয়েছিল, কারণ তারা পরিখার যুদ্ধে আরও বড় শক্তি নিয়ে ফিরে আসে।

যখন দলীয়ভাবে কোন সিদ্ধান্ত যার যার উপর ন্যাস্ত করা হয়, এখন সকলেরই সিদ্ধান্তগুলো মেনে চলা উচিত। 

আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহতায়ালা আমাকে উহুদ পর্বত ও উহুদ যুদ্ধের প্রান্তর জিয়ারত, শাহাদাত বরণকারী সাহাবীদের কবরস্থান জিয়ারত, যে পাহাড় রক্ষার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল সেই পাহাড়ে আরোহন করার এবং উহুদ প্রান্তরের মসজিদে দুই রাকাত নামাজ আদায় করার তৌফিক দান করেছেন। আমীন

আলহামদুলিল্লাহ, হজ্জ পালন শেষে নিজ দেশে ফেরত...

হজ্জ পালন করার চেয়ে, হজ্জ পরবর্তী নিজের জীবন পরিবর্তন আবশ্যক, যেমনটা স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে রক্ষা করা কঠিন। আল্লাহ সবার হজ্জ কবুল করুক এবং ভালো মানুষ হওয়ার তৌফিক দান করুন।

আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহতায়ালা এর নিকট কোটি কোটি শুকরিয়া হজ্জ পালন করে আজ (১৮ই জুলাই, ২০২৩) বাড়ী ফিরে এসেছি। জীবনের সবচেয়ে সুন্দর, ব্যস্ততম এবং কষ্টের সময় পার করলাম। আল্লাহ্‌ আমাদের সকলের এই পবিত্র কাজের প্রতিদান দান প্রদান করুন। আল্লাহতালা তার ঘরে আমাদের সকলের আসার সুযোগ করে দিক, বার বার আসার আর্থিক, শারীরিক ও মনের উচ্চাশা বাড়িয়ে দিক। আমীন।

মা হাওয়া (আঃ) এর কবর জিয়ারত...

মা হওয়া (আঃ) পৃথিবীর প্রথম নারী এবং দ্বিতীয় মানুষ। উনি আমদের আদি পিতা হযরত আদম (আঃ) এর স্ত্রী ছিলেন। ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, আল্লাহ হওয়া (আঃ) কে সৃষ্টি করেছেন আদম (আঃ) এর বাম পাশের ক্ষুদ্রতম পাঁজর থেকে।

হাওয়া (আঃ) এর কবর পুরাতন জেদ্দার বালাদ শহরের পাশে অবস্থিত। আমরা যখন জিয়ারত করতে গিয়েছিলাম তখন কাউকেই কবরস্থানে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়নি। এবং কবরস্থানের দরজা থেকেও ভিতরের কোন ছবি নেওয়ারও অনুমতি নেই। আমরা কবরস্থানের দরজা থেকে দোয়া করে চলে এসেছি। 

যদিও এই কবরস্থানের ভিতরে মা হাওয়া (আঃ) এর কবর, এই বিষয় নিয়ে নিশ্চিত কোন নির্দেশনা নেই বা চিহ্নও নেই। সবগুলি কবরই প্রায় একই রকম।

মসজিদে আয়েশা জিয়ারত...

মসজিদে আয়েশা, ক্বাবা শরীফ থেকে ৫ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত। এই মসজিদ থেকে আমাদের নবীজী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর স্ত্রী আয়েশা (রাঃ) ইহরাম বেঁধে উমরাহ পালন করেছিলেন। এই মসজিদটি  মসজিদে তানীম বা তানীম মসজিদ নামেও পরিচিত এবং ওমরাহ ও হজ্জের আচার পালনকারী তীর্থযাত্রীদের জন্য একটি বিখ্যাত গন্তব্য। 

ওমরাহ এবং হজ্জের পবিত্র তীর্থযাত্রার জন্য মক্কায় অবস্থানকারীদের জন্য মসজিদ আয়েশা একটি মিকাত হিসাবে কাজ করে। ওমরাহ ও হজ্জ করার সময় ইহরাম হল পবিত্র অবস্থা এবং এটি করা ফরজ, অন্যথায় ওমরাহ ও হজ্জ শুরু করা যাবে না বা আদায় হবে না। নির্দিষ্ট মীকাতের যেকোন একটিতে ইহরামের পোশাক পরিবর্তন তথা ইহরাম বাঁধ-তে হবে।

হেরা গুহায় জিয়ারত...

হেরা গুহা, জাবাল আল-নূর বা আলোর পর্বতের চূড়ায় অবস্থিত। জাবাল আল-নূর  কাবা থেকে প্রায় ৫+ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে অবস্থিত।  এই হেরা গুহা সারা বিশ্বের মুসলমানদের জন্য অসাধারণ তাৎপর্য বহন করে, কারণ আমাদের নবীজি হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এই গুহায় ধ্যান করেছিলেন, এবং এখানেই তিনি ফেরেশতা জিবরাঈল (আঃ) মারফত তাঁর প্রথম ওহী পেয়েছিলেন, যার মধ্যে সূরা আল-আলাকের প্রথম পাঁচটি আয়াত ছিল। 

এটি মক্কার অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন আকর্ষণ। পর্বতটি নিজেই ৬৪০ মিটার (২১০০ ফুট) লম্বা;  তবুও গুহায় পৌছাতে এক থেকে দুই ঘণ্টা সময় লাগে।  শীর্ষে ১৭৫০-টি ধাপ রয়েছে যা এমনকি একজন শক্ত-সামর্থ্য ব্যক্তির জন্যও আধা থেকে একঘণ্টা সময় লেগে যেতে পারে। আপনারা একদম কনফিডেন্ট না হয়ে কখনোই উপরে ওঠার চেষ্টা করবেন না, কারণ উপরে ওঠাটা বেশ কষ্টসাধ্য। এর থেকেও বোঝা যায় যে আমাদের নবীজি ধর্ম এবং উম্মতের জন্য কতই না কষ্ট এবং ত্যাগ স্বীকার করেছেন।

আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহতায়ালা আমাকে পর্বতের চূড়ায় উঠে হেরা গুহার ভিতরে প্রবেশ করে সিজদাহ, দোয়া এবং পাশে ২ রাকাত নামাজ আদায় করার তৌফিক দান করেছেন। আমীন

Tuesday, July 11, 2023

মসজিদ আল জীন, মসজিদ আল ফাতাহ এবং আমাদের নবীজির প্রথম স্ত্রী খাদিজা (রাঃ) এর কবর জিয়ারত...

মসজিদ আল জীন এবং মসজিদ আল ফাতাহ, বাইতুল্লাহ বা কাবা শরীফ হতে ৫০০ মিটার বা ০.৫ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত। 

মসজিদ আল জীন সেই জায়গায় নির্মিত যেখানে একদল জীন এক রাতে জড়ো হয়েছিলেন আমাদের নবীজি হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর কুরআন তেলাওয়াত শোনার জন্য। সেখানে জীনদের দলের নেতা সহ সকল সদস্য নবীজির সাথে সাক্ষাৎ করেছিলেন এবং উনার কাছে ইসলামের ও বায়াতের বা আনুগত্যের শপথ গ্রহণ করেছিলেন। ঘটনাটি পবিত্র কুরআনের সূরা আল-জিনে উল্লেখ করা হয়েছে।

মসজিদ আল ফাতাহ, মসজিদ আল জিনের পাশাপাশি অল্প কিছু দূরে অবস্থিত। কথিত আছে, আমাদের নবীজি হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বাইতুল্লাহ বা কাবা বিজয়ের পথিমধ্যে মসজিদ আল ফাতাহ-তে  অবস্থান করেছিলেন।

নবীজির প্রথম স্ত্রী খাদিজা (রাঃ) মক্কার জান্নাতুল মোয়াল্লা কবরস্থানে শায়িত আছেন। তিনি নারীদের মধ্যে সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। এই কবরস্থানে আমাদের নবীজির অনেক আত্মীয়স্বজনেরও কবর রয়েছে। এই কবরস্থানটি মসজিদ আল জীন-এর পিছনে অবস্থিত। আলহামদুলিল্লাহ।