📖 আয়াত: সূরা আল-আ‘রাফ (৭:১৭৫-১৭৬)
🔹 আয়াত ১৭৫:
> وَٱتْلُ عَلَيْهِمْ نَبَأَ ٱلَّذِىٓ ءَاتَيْنَـٰهُ ءَايَـٰتِنَا فَٱنسَلَخَ مِنْهَا فَأَتْبَعَهُ ٱلشَّيْطَـٰنُ فَكَانَ مِنَ ٱلْغَاوِينَ
অনুবাদ:
তুমি তাদেরকে সেই ব্যক্তির কাহিনী শুনাও, যাকে আমি আমার নিদর্শনসমূহ দিয়েছিলাম, অতঃপর সে তা থেকে বিমুখ হয়ে গেল। ফলে শয়তান তাকে অনুসরণ করল এবং সে পথভ্রষ্টদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেল।
🔹 আয়াত ১৭৬:
> وَلَوْ شِئْنَا لَرَفَعْنَـٰهُ بِهَا وَلَـٰكِنَّهُۥٓ أَخْلَدَ إِلَى ٱلْأَرْضِ وَٱتَّبَعَ هَوَىٰهُ ۚ فَمَثَلُهُۥ كَمَثَلِ ٱلْكَلْبِ إِن تَحْمِلْ عَلَيْهِ يَلْهَثْ أَوْ تَتْرُكْهُ يَلْهَث ۚ ذَّٰلِكَ مَثَلُ ٱلْقَوْمِ ٱلَّذِينَ كَذَّبُوا۟ بِـَٔايَـٰتِنَا ۚ فَٱقْصُصِ ٱلْقَصَصَ لَعَلَّهُمْ يَتَفَكَّرُونَ
অনুবাদ:
আমি চাইলে তাকে এ নিদর্শনসমূহের মাধ্যমে মর্যাদার শিখরে উন্নীত করতাম। কিন্তু সে তো পার্থিব জীবনে লিপ্ত হলো এবং তার খেয়াল-খুশির অনুসরণ করল। অতএব তার দৃষ্টান্ত হলো কুকুরের মতো—তুমি যদি তাকে তাড়াও, সে হাঁপায়; আর যদি ছেড়ে দাও, তবুও সে হাঁপায়। এটি সেই জাতির উপমা যারা আমার আয়াতসমূহকে অস্বীকার করে। সুতরাং, তুমি এই কাহিনী বর্ণনা করো, যাতে তারা চিন্তা করে।
📚 ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট
এই আয়াত দুটি এক বিশেষ ব্যক্তিকে কেন্দ্র করে নাজিল হয়েছে। তাফসিরবিদগণের মতে, এই ব্যক্তি ছিল বালআম ইবনে বাউরা নামে একজন আলেম, যিনি মুসা (আ.)-এর সময়কালে বসরার কাছাকাছি বা শাম অঞ্চলে বাস করতেন।
আল্লাহ তাকে বিশেষ জ্ঞান ও নাম দান করেছিলেন, এমনকি তাঁর দোয়া কবুল হতো।
কিন্তু যখন মুসা (আ.) তার কওমকে নিয়ে সেই অঞ্চলে আসেন, তখন তার জাতির লোকেরা বালআমকে প্ররোচিত করে বলেন: “তুমি মুসার বিরুদ্ধে দোয়া করো”।
প্রথমে সে রাজি হয়নি, কিন্তু পরে দুনিয়াবী স্বার্থ ও লোভের কারণে সে আল্লাহর জ্ঞানকে বিকিয়ে দিয়ে মুসা (আ.) ও তাঁর কওমের বিরুদ্ধে দোয়া করেছিল।
তখন সে আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত হয়, এবং চিরন্তন পথভ্রষ্টতায় নিপতিত হয়।
🔍 আয়াত বিশ্লেষণ
✳️ "آتَيْنَاهُ آيَاتِنَا"
আল্লাহ তাকে তাঁর আয়াত (জ্ঞান, হিকমাহ, দোয়া কবুলের শক্তি) দিয়েছিলেন।
✳️ "فَٱنسَلَخَ مِنْهَا"
সে নিজেই সেচ্ছায় আল্লাহর আয়াত থেকে বের হয়ে গেল (উপেক্ষা করল, ছেড়ে দিল)। এটি জামা খুলে ফেলার মতো, মানে সম্পূর্ণভাবে ছাড় দেওয়া।
✳️ "فَأَتْبَعَهُ ٱلشَّيْطَـٰنُ"
ফলে শয়তান তাকে অনুসরণ করল এবং তাকে গোমরাহিতে ফেলল।
✳️ "أَخْلَدَ إِلَى ٱلْأَرْضِ"
সে দুনিয়াতে আসক্ত হলো। ‘আখলাদ’ মানে মাটি বা নিচের দিকে ঝুঁকে পড়া—অর্থাৎ দুনিয়ার লোভ, ক্ষমতা, টাকা, খ্যাতির জন্য নিজের ধর্মীয় মর্যাদা বিসর্জন দেওয়া।
✳️ "كَمَثَلِ ٱلْكَلْبِ"
তাকে কুকুরের সাথে তুলনা করা হয়েছে—একটি প্রাণী যার হাঁপ ধরা সব সময়ই চলে: তুমি তাকে মারো, অথবা না মারো—সে হাঁপাবে। এমন ব্যক্তি শয়তান ও প্রবৃত্তির গোলাম, কখনো থামে না, কখনো সন্তুষ্ট হয় না।
🧠 শিক্ষণীয় বিষয় (ইবরত):
❌ শুধু জ্ঞান থাকলেই চলবে না আমল না থাকলে, জ্ঞান মানুষকে আরো নিচে নামিয়ে দেয়।
🛑 দ্বীনের জ্ঞান বিক্রি হারাম আল্লাহর আয়াত, হাদীস বা ইসলামী শিক্ষা দিয়ে দুনিয়ার স্বার্থ (পদ, টাকা, স্বীকৃতি) অর্জন করা এক ভয়ংকর অপরাধ।
🔥 দুনিয়াপ্রেম ধ্বংস করে দুনিয়ার মোহ মানুষকে পথভ্রষ্ট করে, যদিও সে আগে ধার্মিক ছিল।
কুকুরের তুলনা : কুকুর সব সময় হাঁপায়—এটা এমন এক আচরণ যা থামে না; তেমনি এই শ্রেণির মানুষ সব সময় চাহিদা, লোভ ও প্রবৃত্তির দাসত্ব করে।
🧭 সতর্কতা যারা দ্বীনের দায়িত্বে আছেন (আলেম, দাঈ, ইমাম, শিক্ষক) তাদের জন্য বড় সতর্কবার্তা—আল্লাহর জ্ঞানকে কখনো দুনিয়ার বিনিময়ে ব্যবহার করা যাবে না
📌 উপসংহার:
এই আয়াত আমাদের সকলকে স্মরণ করিয়ে দেয় যে,
> আল্লাহর এলেম একটি আমানত।
এই এলেম শুধু জানার জন্য নয়—বরং আমলের জন্য।
যদি কেউ এটি বিকিয়ে দেয় দুনিয়ার স্বার্থে, তার পরিণাম পশুর চেয়েও জঘন্য।
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে এই আয়াত থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে তাঁর পথে দৃঢ়ভাবে চলার তাওফিক দিন।
আল্লাহুম্মা আমীন।
No comments:
Post a Comment