আয়াত (সূরা আত-তাগাবুন, আয়াত ১৭)
إِن تُقْرِضُوا اللَّهَ قَرْضًا حَسَنًا يُضَاعِفْهُ لَكُمْ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ۚ وَاللَّهُ شَكُورٌ حَلِيمٌ
বাংলা অনুবাদ
“তোমরা যদি আল্লাহকে উত্তম ঋণ প্রদান করো, তবে তিনি তা তোমাদের জন্য বহু গুণ বাড়িয়ে দিবেন এবং তোমাদেরকে ক্ষমা করবেন। আর আল্লাহ অতিশয় কৃতজ্ঞ, অতি সহনশীল।”
তাফসীর ও ব্যাখ্যা
১. “আল্লাহকে উত্তম ঋণ প্রদান” এর অর্থ কী?
এখানে “ঋণ” বলতে বোঝানো হয়েছে আল্লাহর পথে দান-খয়রাত, সদকা, জাকাত এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে ব্যয় করা।
যেহেতু মানুষ আসলে যা ব্যয় করে সবই আল্লাহর দেওয়া, তবুও আল্লাহ দয়ার কারণে একে “ঋণ” বলেছেন। যেন মানুষ মনে করে – এটা হারিয়ে যায়নি, বরং আল্লাহর কাছে জমা হয়ে আছে।
২. “উত্তম ঋণ” (قرضًا حسنًا)
বিশুদ্ধ নিয়তে, কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে, রিয়া (দেখানো), স্বার্থ কিংবা কষ্ট না দিয়ে দান করা।
যেমন: অসহায়কে সাহায্য করা, দ্বীনের কাজে খরচ করা, এতিম, গরীব, মাদ্রাসা/মসজিদে সাহায্য ইত্যাদি।
৩. “ইউদ্বা’ইফহু লাকুম” – আল্লাহ গুণ বাড়িয়ে দিবেন
আল্লাহ তা দুনিয়া ও আখিরাতে বহুগুণে ফিরিয়ে দেন।
অন্য আয়াতে (সূরা বাকারা ২:২৬১) বলা হয়েছে: “একটি দানা সাত শিষ উৎপন্ন করে, প্রতিটি শিষে একশ’ দানা থাকে; আল্লাহ যাকে ইচ্ছা করেন, তার জন্য আরও বাড়িয়ে দেন।”
অর্থাৎ ১ টাকার দান আখিরাতে শত শত গুণে বৃদ্ধি পাবে।
৪. “ওয়া ইয়াগফির লাকুম” – এবং তিনি তোমাদেরকে ক্ষমা করবেন
দান-খয়রাতের মাধ্যমে আল্লাহ বান্দার গুনাহ মাফ করে দেন।
অর্থাৎ দান শুধু সম্পদ বৃদ্ধি নয়, বরং আত্মার পরিশুদ্ধি ও গুনাহ থেকে মুক্তিরও মাধ্যম।
৫. আল্লাহর দুটি সুন্দর গুণের উল্লেখ
শাকুর (شكور) – বান্দার সামান্য আমলও তিনি অনেক গুণে বাড়িয়ে প্রতিদান দেন।
হালীম (حليم) – বান্দারা কখনো দান না করলেও, গুনাহ করলেও তিনি তৎক্ষণাৎ শাস্তি দেন না, বরং ধৈর্য ধারণ করেন, সময় দেন তাওবার জন্য।
সারসংক্ষেপ
এই আয়াত আমাদের শিক্ষা দেয় যে—
দান-খয়রাত আসলে “আল্লাহকে ঋণ দেওয়া”র সমান।
বিশুদ্ধ নিয়তে দান করলে আল্লাহ তা বহুগুণে ফিরিয়ে দেন এবং গুনাহ মাফ করে দেন।
দান শুধু গরীবের জন্য নয়, দানকারী নিজেকেও আল্লাহর রহমত, মাগফিরাত ও জান্নাতের যোগ্য করে তোলে।
No comments:
Post a Comment