একদা একজন সৎ ও কর্মঠ ব্যক্তি ছিলেন। তিনি আর্থিকভাবে খুব স্বাবলম্বী না হলেও, সৎ উপার্জনে তার জীবন সুন্দরভাবেই চলছিল। তিনি সর্বদা উপরওয়ালার প্রতি কৃতজ্ঞ ছিলেন।
তার সততা ও পরিশ্রমে সন্তুষ্ট হয়ে আল্লাহ তাকে একটি সোনার ডিম পাড়া হাঁস দান করলেন। হাঁসটি প্রতিদিন একটি করে সোনার ডিম দিত। এগুলো বিক্রি করে লোকটির অর্থনৈতিক অবস্থা ধীরে ধীরে উন্নত হতে লাগল। কিছুদিনের মধ্যেই তিনি সম্পদশালী ও প্রভাবশালী ব্যক্তিতে পরিণত হলেন।
কিন্তু যতই ধনী হচ্ছিলেন, ততই তার অন্তর থেকে কৃতজ্ঞতা ও আস্থা হারিয়ে যাচ্ছিল। একসময় লোভে অন্ধ হয়ে তিনি প্রতিদিন একটি করে ডিমে আর সন্তুষ্ট থাকতে পারলেন না। তার মনে হলো—“একবারেই সব ডিম পেয়ে ধনী হয়ে যাব।”
সে হাঁসটিকে জবাই করল, ভেবেছিল পেটের ভেতর অনেক সোনার ডিম জমা আছে। কিন্তু বিধিবাম! হাঁসের পেটে কিছুই ছিল না। হাঁসটিও মারা গেল, আর সোনার ডিমও আর কখনো পাওয়া গেল না। হতাশ হয়ে লোকটি আফসোস করতে লাগল—“আগে প্রতিদিন একটি করে ডিম পেতাম, জীবনে সুখ ছিল। এখন হাঁসটিও নেই, ডিমও নেই। আমার তো সবই শেষ!”
এই গল্প শুধু একজন ব্যক্তির নয়, বরং অনেক সমাজ ও রাষ্ট্রের ক্ষমতাধরদের সঙ্গেও মিলে যায়। শুরুতে সৎ প্রচেষ্টায় তারা ক্ষমতার সুযোগ পায়—যেন সোনার ডিম পাড়া হাঁস। কিন্তু ধীরে ধীরে কৃতজ্ঞতা ভুলে গিয়ে যখন লোভ, অধৈর্য্য ও অন্যায়ে লিপ্ত হয়, তখন একসময় তাদের কাছ থেকে সবকিছু কেড়ে নেওয়া হয়—সম্পদ, মানসম্মান, ক্ষমতা সবই।
আসলে সবকিছুই আল্লাহর দেওয়া নেয়ামত। যিনি দিয়েছেন, তিনিই চাইলে তা ফিরিয়ে নিতে পারেন। তাই যারা তাঁর আশীর্বাদকে সঠিকভাবে মূল্যায়ন করবে এবং কৃতজ্ঞ থাকবে, তারা বরকত পাবে। আর যারা লোভে ও প্রতারণায় অন্ধ হবে, তাদের অবস্থা ওই হাঁস মারা লোকটির মতোই হবে—“আমও গেল, ছালাও গেল।”
No comments:
Post a Comment