ইসলাম একটি শান্তিপূর্ণ ধর্ম, যা ন্যায়বিচার, সহনশীলতা এবং মানবাধিকারের উপর অত্যন্ত গুরুত্বারোপ করে। নন-মুসলিমদের বাড়িঘর ভাঙচুর, নির্যাতন বা উচ্ছেদের মতো কর্মকাণ্ড ইসলামের মৌলিক নীতিমালার পরিপন্থী।
কোরআনের দৃষ্টিকোণ থেকে:
১. ধর্মে জোরজবরদস্তি নেই
﴿لَا إِكْرَاهَ فِي الدِّينِ﴾
> “ধর্মে কোনো জবরদস্তি নেই।”
📖 [সূরা আল-বাকারা, আয়াত ২৫৬]
➡️ ইসলাম কখনো কাউকে ধর্ম গ্রহণে বাধ্য করতে বলে না। অতএব, অন্য ধর্মাবলম্বীদের উপর জুলুম বা উচ্ছেদ – এটা স্পষ্টভাবে নিষিদ্ধ।
২. অন্য ধর্মের উপাসনালয় রক্ষা
> “আর যদি আল্লাহ্ মানুষকে একে অপরের দ্বারা প্রতিহত না করতেন, তবে ভেঙে ফেলা হতো অনেক গির্জা, উপাসনালয়, সিনাগগ ও মসজিদ, যেগুলোতে আল্লাহ্র নাম অধিক স্মরণ করা হয়।”
📖 [সূরা হজ্জ, আয়াত ৪০]
➡️ ইসলাম শুধু মসজিদ নয়, অন্য ধর্মের উপাসনালয়ের নিরাপত্তাও গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে।
৩. ন্যায়বিচার বজায় রাখা
> “আল্লাহ্ তোমাদেরকে সেই সমস্ত লোকের সঙ্গে সদ্ব্যবহার ও ন্যায়বিচার করতে নিষেধ করেন না, যারা ধর্ম বিষয়ে তোমাদের সঙ্গে যুদ্ধ করে না কিংবা তোমাদেরকে তোমাদের ঘর থেকে বের করে দেয় না।”
📖 [সূরা মুমতাহিনা, আয়াত ৮]
➡️ অর্থাৎ, যারা মুসলিমদের প্রতি কোনো শত্রুতা দেখায় না, তাদের সঙ্গে সদাচরণ ও ন্যায়বিচার করা ইসলামের নির্দেশ।
হাদীসের আলোকে:
১. অমুসলিমদের নিরাপত্তা দেয়া মুসলিমের দায়িত্ব
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
> "যে ব্যক্তি কোনো মো’আহিদ (অমুসলিম নাগরিক) কে হত্যা করল, সে জান্নাতের সুগন্ধও পাবে না, অথচ জান্নাতের সুগন্ধ চল্লিশ বছরের দূর থেকেও পাওয়া যায়।”
📚 সহীহ বুখারী: ৩১৬৬
➡️ ইসলামী রাষ্ট্রে বসবাসকারী অমুসলিমদের জান-মালের নিরাপত্তা বিধান করা মুসলমানদের দায়িত্ব।
২. অন্যায়ের শিকারকে সাহায্য করা
> “তুমি জুলুম করো না এবং অন্যকে জুলুম করতে দিও না।”
📚 সহীহ মুসলিম
➡️ এটি সার্বজনীন নীতি – মুসলিম হোক বা নন-মুসলিম, কারো উপর জুলুম করা সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ।
ইসলামের ইতিহাস থেকে দৃষ্টান্ত:
রাসূলুল্লাহ (সা.) যখন মদিনায় হিজরত করেন, তখন তিনি মদিনার সংবিধান নামে এক চুক্তিতে মুসলিম, ইহুদি ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে সহাবস্থান নিশ্চিত করেন।
খলিফা ওমর (রাঃ) বাইতুল মুকাদ্দাস বিজয়ের সময় গির্জা ধ্বংস করেননি; বরং নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেন।
🔚 উপসংহার:
🔴 অমুসলিমদের বাড়িঘর ভাঙচুর, নির্যাতন বা উচ্ছেদ করা ইসলামি নীতিমালার সম্পূর্ণ বিরোধী। বরং ইসলাম অন্য ধর্মাবলম্বীদের প্রতি সদাচরণ, সহনশীলতা এবং নিরাপত্তা দেওয়ার আদেশ দেয়।
📌 যদি কোনো অমুসলিম মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ বা ষড়যন্ত্র করে, তখন সেটা রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে বিচারের বিষয় — ব্যক্তি পর্যায়ে কোনো আক্রমণ বা প্রতিশোধ ইসলামে বৈধ নয়।
আল্লাহ্ তায়ালার নিকট দোয়া করি যেন তিনি আমাদের সকলকে ন্যায়, ইনসাফ ও সহানুভূতির পথে পরিচালিত করেন। আমিন।
রংপুরে ঘটে যাওয়া সাম্প্রতিক ঘটনা আমাদের সবাইকে গভীরভাবে ভাবিয়ে তুলেছে। এ জাতীয় ঘটনা শুধু মানবিক বা আইনগতভাবে নয়, বরং ইসলামী মূল্যবোধের দৃষ্টিকোণ থেকেও অত্যন্ত নিন্দনীয়।
দাবি জানাচ্ছি পূর্ণাঙ্গ, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ তদন্তের মাধ্যমে—
1️⃣ যদি কেউ সত্যিই ধর্ম অবমাননার মতো অপরাধে লিপ্ত হয়ে থাকে, তবে তাকে যথাযথ প্রমাণসাপেক্ষে আইনের আওতায় এনে শাস্তি প্রদান করতে হবে। ইসলাম নিজেই ধর্ম ও নবীর সম্মান রক্ষায় রাষ্ট্রীয় আইনের আশ্রয় নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে, ব্যক্তিগত প্রতিশোধের নয়।
2️⃣ অপরদিকে, যারা আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে ঘরবাড়ি ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ বা সংখ্যালঘুদের উপর আক্রমণ করেছে—তাদেরও আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।
📌 ইসলাম কোনো নিরপরাধ মানুষের উপর জুলুম, সন্ত্রাস বা সহিংসতা সমর্থন করে না—তা সে মুসলিম হোক বা অমুসলিম। রাসূল (সা.) নিজেই বলেছেন:
> "যে ব্যক্তি কোনো 'মুআহিদ' (অমুসলিম নাগরিক)-কে হত্যা করল, সে জান্নাতের ঘ্রাণও পাবে না।"
📚 (সহীহ বুখারী)
No comments:
Post a Comment