Monday, July 31, 2023

তায়েফ ভ্রমন (পর্ব - ৩) : তায়েফবাসী আমাদের নবীজিকে যে স্থানে পাথর মেরে রক্তাক্ত করেছিল এবং আহত অবস্থায় আমাদের নবীজি ইহুদীর যে আঙ্গুর বাগানে বিশ্রাম নিয়েছিলেন, সে স্থানগুলো জিয়ারত...

আমাদের নবীজি অনেক আশা নিয়ে ইসলামের দাওয়াত দিতে তায়েফে গমন করেছিলেন। তায়েফবাসী নবীজির ইসলামের দাওয়াত গ্রহণ করেনি, বরং শিশুদের পিছনে লেলিয়ে দিয়েছিল এবং পাথর মেরে মেরে উনাকে রক্তাক্ত করে ফেলেছিল। 

আহত অবস্থায় উনি এক ইহুদির আঙ্গুর বাগানে বিশ্রাম নিয়েছিলেন এবং ওই ইহুদির এক গোলাম যার নাম আদ্দাস নবীজির খেদমত করেছিলেন। উনাকে আঙ্গুরের শরবত খাইয়েছিলেন। আমাদের নবীজি যে স্থানে বিশ্রাম নিয়েছিলেন বর্তমানে ঐ স্থানে একটি মসজিদ অবস্থিত, যা মসজিদে আদ্দাস নামে পরিচিত। 

আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহপাক আমাকে সেই আঙ্গুর বাগানের জায়গায় (বর্তমানে আঙ্গুর বাগানটি আর নেই) এবং মসজিদে আদ্দাস-এ যাওয়ার তৌফিক দান করেছিলেন। আমীন।  

আপনারা তায়েফে ভ্রমণ করলে অবশ্যই এই স্থানগুলো জিয়ারত করবেন।

Journey by Boat...






তায়েফ ভ্রমন (পর্ব - ২) : ইবনে আব্বাস (রাঃ) মসজিদ এবং উঁনার কবরস্থান জিয়ারত...

ইবনে আব্বাস (রাঃ) একজন গুরুত্বপূর্ণ সাহাবী ছিলেন। উনি একজন বিখ্যাত মুফাসসির বা কুরআনের ব্যাখ্যাকারী ছিলেন। উনাকে জ্ঞানীদের জ্ঞানী বলা হয়। একজন মুফাসসিরের ১৫ টি বিষয়ে জ্ঞান এবং দক্ষতা থাকতে হয়। জুম্মা বা ঈদ বা অন্যান্য খুতবায় যে কয়েকজন বিখ্যাত সাহাবীর নাম পাঠ করা হয়, তার মধ্যে উনিও একজন। সম্পর্কে উনি আমাদের নবীজির চাচাতো ভাই ছিলেন। 

মসজিদটি তায়েফ শহরের মাঝামাঝি আলমানতিকা আলমারকাজিয়ায়  অবস্থিত। কিং ফয়সাল টানেলের ঠিক পশ্চিমে অবস্থিত। দু'বার তায়েফ ভ্রমনে এই মসজিদে দু'বার নামাজ আদায় করার সুযোগ হয়েছে, আলহামদুলিল্লাহ। 

ইবনে আব্বাস (রাঃ) এর কবরস্থান মসজিদটির উত্তর পূর্ব কোনে মসজিদের প্রবেশ পথের পাশে অবস্থিত। কবরস্থানটির চতুর্দিকে দেয়াল দিয়ে ঢাকা। 

আপনারা তায়েফ ভ্রমণ করলে অবশ্যই ইবনে আব্বাস (রাঃ) মসজিদ ও উঁনার কবরস্থান জিয়ারত এবং মসজিদে দুই রাকাত নামাজ আদায় করবেন।

Sunday, July 30, 2023

তায়েফ ভ্রমন (পর্ব - ১) : তায়েফ শহর, মীকাত মসজিদ এবং অন্যান্য স্থাপনা জিয়ারত...

তায়েফ শহর, মসজিদ আল হারাম বা ক্বাবা শরীফ থেকে ৯০ কিলোমিটার পূর্ব দিকে অবস্থিত। এই শহরটি হাদা পর্বতের উপর অবস্থিত, যা প্রায় ভূপৃষ্ঠ থেকে ১৮৭৯ মিটার বা ৬১৫০ ফিটেরও উপর উচ্চতায়। তায়েফ শহরটি খুবই পরিপাটি, গোছানো, পরিচ্ছন্ন, সবুজ প্রকৃতিময়, সুদর্শন স্থাপনা, উদ্যান ইত্যাদি সহ একটি নয়নাভিরাম শহর। এখানকার আবহাওয়া খুবই চমৎকার এবং সহনশীল। এখানকার তাপমাত্রা ১০~১২ ডিগ্রি থেকে ২৮~৩০ ডিগ্রি পর্যন্ত ওঠানামা করে। এখানে প্রচুর পরিমাণ আঙ্গুর, তরমুজ, চেরি, বাঙ্গি ইত্যাদি ফল উৎপাদিত হয় এবং খুবই সুস্বাদু। তুলনামূলক খুবই সস্তায় পাওয়া যায়। 

তায়েফে যাওয়ার দুটি রাস্তা, হয় বাসে করে অথবা ট্যাক্সি বা ছোট গাড়ি করে। বাসে বা বড় গাড়িগুলোতে গেলে আপনারা পাহাড়ে উঠার দৃশ্য অবলোকন করতে পারবেন না। ট্যাক্সি বা ছোট গাড়িতে গেলে আপনি পাহাড়ের আঁকাবাঁকা পথ বেয়ে উপরে ওঠার নয়নাভিরাম দৃশ্য উপভোগ করতে পারবেন। 

তায়েফের অন্যতম একটি আকর্ষণ হচ্ছে "তায়েফ কেবল কার" বা "টেলিফ্রিক আল হাদা" যা আল হাদা কার রিসোর্টে অবস্থিত। এটি আল হাদা রিং রোড, আল হাদা, তায়েফ-এ অবস্থিত। ক্যাবল কারটি ১৫৫০ মিটারের বেশি দূরত্বে বিস্তৃত। রাইডটি সম্পূর্ণ করতে মোট সময় লাগে প্রায় ১৫ মিনিট যা সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্যের অপূর্ব সৌন্দর্য প্রদান করে। শীর্ষে যাওয়ার পথে পর্যটকরা শুভ্র প্রাসাদ, আল হাদা পর্বত, তায়েফ গোলাপের বাগান এবং আরও অনেক কিছুর দর্শনীয় দৃশ্য উপভোগ করতে পারবেন। একটি টিকিটের মূল্য প্রায় ৮৪ সৌদি রিয়াল, যা সময়ে সময়ে পরিবর্তিত হতে পারে। এটি সকাল ৯ টা থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত খোলা থাকে।

এই তায়েফে চারটি গুরুত্বপূর্ণ মীকাতের মধ্যে একটি অবস্থিত যার নাম "করণ-আল মানাজিল"। এই মীকাতের মসজিদ থেকে ইহরাম বেঁধে আপনারা হজ্জ বা উমরাহ পালন করতে পারবেন।

উহুদ পর্বতের উপত্যকায় উহুদ যুদ্ধের প্রান্তর এবং শাহাদাত বরণকারী সাহাবীদের কবরস্থান জিয়ারত...

উহুদের যুদ্ধ ইসলামের ইতিহাসে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি যুদ্ধ যা শনিবার, ৭ই শাওয়াল ৩ হিজরি বা ২৩ মার্চ ৬২৫ খ্রিস্টাব্দে মদিনার কাছে উহুদ পর্বতের উত্তরে একটি উপত্যকায় সংঘটিত হয়েছিল।

উহুদ যুদ্ধের প্রাথমিক পর্যায়ে মুসলমানদের বিজয় নিকটবর্তী বলে মনে হয়েছিল এবং কুরাইশ অগ্রগামীরা তাদের শিবিরগুলোকে অরক্ষিত রেখে পিছু হটতে শুরু করেছিল। ঠিক তখনই মুসলমানদের একটি বাহিনী, যাদেরকে একটি সম্ভাব্য ঘেরাও থেকে রক্ষা করার জন্য একটি পাহাড় রক্ষার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, তারা পলায়নকারী শত্রুর রেখে যাওয়া গনিমতের মালামাল সংগ্রহের জন্য তাদের অবস্থান ত্যাগ করেছিল।  ঘটনার এই পালাটি কুরাইশ জেনারেল খালিদ ইবনে আল-ওয়ালিদ দ্বারা পূণঃ-আক্রমণ সংঘটিত হয়েছিল, যিনি অরক্ষিত পিছনে একটি সাহসী অশ্বারোহী স্ট্রাইক শুরু করেছিলেন এবং মুসলমানদের ঘিরে ফেলেছিলেন, যা যুদ্ধের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল। এই যুদ্ধে প্রায় ৭০ জন সাহাবী শাহাদাত বরণ করেছিলেন, যার মধ্যে আমির হামজা (রাঃ), মুসাব বিন উমায়ের (রাঃ) ও আব্দুল্লাহ বিন জশ (রাঃ) এর মধ্যে বিখ্যাত সাহাবীরাও ছিলেন। আমাদের নবীজি নিজেও আহত হয়েছিলেন।

যুদ্ধটিকে মুসলমানদের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য ধাক্কা বা পরীক্ষা এবং কুরাইশদের জন্য একটি ছোট বিজয় হিসাবে দেখা হয়েছিল, কারণ তারা পরিখার যুদ্ধে আরও বড় শক্তি নিয়ে ফিরে আসে।

যখন দলীয়ভাবে কোন সিদ্ধান্ত যার যার উপর ন্যাস্ত করা হয়, এখন সকলেরই সিদ্ধান্তগুলো মেনে চলা উচিত। 

আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহতায়ালা আমাকে উহুদ পর্বত ও উহুদ যুদ্ধের প্রান্তর জিয়ারত, শাহাদাত বরণকারী সাহাবীদের কবরস্থান জিয়ারত, যে পাহাড় রক্ষার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল সেই পাহাড়ে আরোহন করার এবং উহুদ প্রান্তরের মসজিদে দুই রাকাত নামাজ আদায় করার তৌফিক দান করেছেন। আমীন