Sunday, June 15, 2025

সাত প্রকার মানুষ থেকে দূরে থাকুন...

সতর্ক থাকুন!
এই সাত ধরনের মানুষ আপনার জীবন ধ্বংস করে দিতে পারে
(প্রতিটি পয়েন্টে বাস্তব জীবনের উদাহরণসহ ব্যাখ্যা)

১. ঠেলাগাড়ি মানুষ (Wheelbarrow People)
এরা সেই মানুষ, যারা নিজের জীবনের সমস্যাগুলো নিজেরা সামলাতে চায় না। আপনি যতই সাহায্য করুন না কেন, সব ভারই যেন আপনাকেই বইতে হবে। তারা চায়—আপনি তাদের খাওয়ান, চলার পথ দেখান, আবার পেছন থেকে ঠেলেও নিয়ে যান।
উদাহরণ: ধরো তোমার এক বন্ধু আছে, প্রতিবার প্রজেক্ট শুরু হলে বলে, “তুই তো ভালো জানিস, তুই কর, আমি ফাইনাল প্রেজেন্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকব।” সে ফল পেতে চায়, কিন্তু পরিশ্রম করতে চায় না।

শিক্ষা: যেসব সম্পর্ক শুধু একতরফা দায়িত্বের, সেগুলো সময়মতো চিনে সরে দাঁড়াও।

২. মশা মানুষ (Mosquito People)
এই মানুষরা আসে শুধু তোমার ভালোটা শুষে নিতে। যখন তোমার টাকা, সময়, যোগাযোগ, জনপ্রিয়তা বা সাফল্য দরকার হয়, তখন ওদের দেখা যায়। পরে সুযোগ পেলেই কটূক্তি করে, গুজব ছড়ায়।
উদাহরণ: ভাবো, কেউ তোমার কাছ থেকে রেফারেন্স চায় চাকরির জন্য। তুমি সাহায্য করো। পরে তাকে নিজের প্রয়োজনে ফোন দিলে বলে, “আসলে ব্যস্ত ছিলাম।” অথচ অন্যকে বলছে, “ও তো শুধু নিজ স্বার্থ দেখে!”

শিক্ষা: যাদের উপস্থিতি কেবল নিজের লাভের সময়েই দেখা যায়, তাদের এড়িয়ে চলাই বুদ্ধিমানের কাজ।

৩. বাঁধাই কাঠামো মানুষ (Scaffolding People)
তারা এক সময় সাহায্য করেছে, কিন্তু এখন চায় তুমি সব সিদ্ধান্তে তাদের অনুমোদন চাও। তারা তোমার সাফল্যে বাধা হয়ে দাঁড়ায়—মনে করে, তুমি চিরকাল তাদের ঋণী।
উদাহরণ: যেমন কোনো আত্মীয় তোমার পড়ালেখার খরচে একবার সাহায্য করেছিল। এখন যখন তুমি স্বাধীন হতে চাও, তখন বলে, “আমার মতামত ছাড়া কোনো সিদ্ধান্ত নেবে না।”

শিক্ষা: কৃতজ্ঞ হও, কিন্তু কারও ছায়ায় নিজেকে হারিয়ে ফেলো না।

৪. কুমির মানুষ (Crocodile People)
এই মানুষরা মিষ্টি ব্যবহার করে তোমার মন জয় করে, তারপর গোপন তথ্য জেনে রাখে। সুযোগ পেলেই সেই তথ্য দিয়ে তোমার ক্ষতি করে।
উদাহরণ: ধরো, তুমি কাউকে বলেছিলে—তোমার পরিবারে কিছু আর্থিক সমস্যা চলছে। পরে একদিন ওর সঙ্গে ঝামেলা হলে, সে এই কথাই অন্যদের সামনে এনে তোমাকে হেয় করে।

শিক্ষা: কারও মুখের মাধুর্যে বিভ্রান্ত হয়ো না, আগে যাচাই করো—সে মানুষ না মুখোশধারী।

৫. গিরগিটি মানুষ (Chameleon People)
এরা বাইরে থেকে বন্ধুর মতো—তোমার খোঁজও রাখে, পাশে হাঁটেও। কিন্তু আসলে তোমার প্রতিটি সাফল্য ওদের পুড়িয়ে দেয়। তোমার অর্জনে ওদের মুখ বন্ধ, কিন্তু তোমার সামান্য ভুল হলে ওদের মুখে ফেটে পড়ে উপহাস।
উদাহরণ: তুমি একটি প্রতিযোগিতায় পুরস্কার পেলে—ও মুখে বলে “ভালো হয়েছে”, কিন্তু ফেসবুকে তোমার ভুল বানান তুলে ধরে স্ট্যাটাস দেয়।

শিক্ষা: যে মানুষ তোমার আনন্দে মুখ গোমড়া করে, তাকে বন্ধু ভাবলে চলবে না।

৬. না-বলা মানুষ (Naysayer People)
তারা কখনোই তোমার স্বপ্নে বিশ্বাস রাখবে না। বরং তারা এতটাই নেতিবাচক যে, তুমি কিছু শুরু করার আগেই মনোবল হারিয়ে ফেলবে।
উদাহরণ: তুমি যদি বলো, “আমি ইউটিউব চ্যানেল খুলতে চাই”, ও বলবে, “ওসব কেউ দেখে না”, “তুই পারবি না”, “সার্চ রেজাল্টে আসবে না”—অথচ তারা নিজে কোনো চেষ্টা করে না।

শিক্ষা: নিজের স্বপ্নকে বাঁচাতে চাইলে, স্বপ্নহীনদের থেকে নিজেকে বাঁচাও।

৭. আবর্জনা ঠেলা মানুষ (Garbage Pusher People)
তারা সবসময় নেতিবাচক খবর ছড়ায়—কখনো কিছু ভালো বলতে জানে না। তোমার আশেপাশের পরিবেশকে বিষাক্ত করে তোলে হতাশা আর ভয়ের গল্প ছড়িয়ে।
উদাহরণ: তুমি যদি একটা ভালো উদ্যোগের পরিকল্পনা করো, সে বলবে “বাজার খারাপ”, “সব জিনিস লস”, “এই দেশে কিছু হয় না”—এমন কথা শুনিয়ে চেষ্টার আগেই সাহস কেড়ে নেবে।

শিক্ষা: যাদের চিন্তায় কেবল অন্ধকার, তারা তোমার ভেতরের আলো নিভিয়ে দিতে পারে—তাদের এড়িয়ে চলাই শ্রেয়।

শেষ কথা:
জীবনের প্রতিটি ধাপে কার সঙ্গে পথ চলছেন—এটাই ঠিক করে আপনি কত দূর যেতে পারবে। সম্পর্ক বেছে নিন মাথা ঠাণ্ডা রেখে, হৃদয় উষ্ণ রেখে। সবকিছুতে ভালোবাসা দিবেন, কিন্তু নিজেকে বিলিয়ে দিবেন না এমন কাউকে, যে আপনার ডানাকে কেটে নিজের ছায়া বাড়াতে চায়।

©সংগৃহিত

Saturday, June 14, 2025

সূরা যুমার (৩৯)-এর ৫৩ নম্বর আয়াতটি হলো কুরআনের সবচেয়ে আশাব্যঞ্জক, হৃদয়ছোঁয়া ও ক্ষমাপরায়ণতার বার্তা বহনকারী আয়াতগুলোর একটি।

⚠️ সতর্কতা: ইসলামিক পোস্ট - মতভেদ থাকতে পারে, দয়া করে নিজ বিবেচনায় পড়ুন।

সূরা যুমার (৩৯)-এর ৫৩ নম্বর আয়াতটি হলো কুরআনের সবচেয়ে আশাব্যঞ্জক, হৃদয়ছোঁয়া ও ক্ষমাপরায়ণতার বার্তা বহনকারী আয়াতগুলোর একটি। আয়াতটি হচ্ছে:

> قُلْ يَا عِبَادِيَ ٱلَّذِينَ أَسْرَفُوا۟ عَلَىٰٓ أَنفُسِهِمْ لَا تَقْنَطُوا۟ مِن رَّحْمَةِ ٱللَّهِ ۚ إِنَّ ٱللَّهَ يَغْفِرُ ٱلذُّنُوبَ جَمِيعًا ۚ إِنَّهُۥ هُوَ ٱلْغَفُورُ ٱلرَّحِيمُ

_উচ্চারণ:_
Qul yā ʿibādiya alladhīna asrafū ʿalā anfusihim lā taqnaṭū min raḥmati-llāh, inna-llāha yaghfiru-dh-dhunūba jamīʿā, innahu huwa-l-ghafūru-r-raḥīm

অনুবাদ (তাফসিরভিত্তিক):
বলুন (হে মুহাম্মাদ ﷺ): “হে আমার বান্দাগণ! যারা নিজেদের উপর সীমালঙ্ঘন করেছো (অর্থাৎ পাপ করে ফেলেছো), তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সব ধরনের পাপ ক্ষমা করে থাকেন। তিনি তো পরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।”

🌟 তাৎপর্য

১. আল্লাহর বার্তা সরাসরি পাপীদের উদ্দেশ্যে:
এই আয়াতে আল্লাহ পাপীদের "يا عبادي" (হে আমার বান্দাগণ) বলে সম্বোধন করেছেন, যা এক গভীর মমত্ব ও দয়ার পরিচয়। এটি পাপীদের প্রতি ঘৃণা বা বর্জনের নয়, বরং আহ্বানের ভাষা।

২. ‘আসরাফু’—অর্থাৎ সীমালঙ্ঘনকারীরা:
এরা কেবল পাপী নয়, বরং এমন লোক, যারা বহুবার ও মারাত্মকভাবে নিজের উপর জুলুম করেছে—অর্থাৎ বহুবার পাপ করেছে। এমন লোকদেরও নিরাশ না হওয়ার কথা বলা হয়েছে।

৩. ‘لا تَقْنَطُوا’ — নিরাশ হয়ো না:
এটি একেবারে নিষেধাজ্ঞার ভঙ্গিতে এসেছে। নিরাশ হওয়া একপ্রকার শয়তানের প্ররোচনা। আল্লাহর দয়ার ব্যাপকতা এতটাই, যে কোনো পাপ (তাওবা না করলে শিরক ব্যতীত) তিনি ক্ষমা করতে প্রস্তুত।

৪. ‘يَغْفِرُ الذُّنُوبَ جَمِيعًا’—সব পাপ ক্ষমাযোগ্য:
এখানে “সব পাপ” বলার মাধ্যমে মানুষের অন্তরের মধ্যে আশা সৃষ্টি করা হয়েছে। কেউ যদি চিন্তা করে, "আমি এত বড় পাপ করেছি যে আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করবেন না" — তাহলে সে যেন জেনে নেয়, আল্লাহ সব পাপ ক্ষমা করেন, যদি বান্দা খাঁটি তাওবা করে।

৫. ‘هُوَ الغَفُورُ الرَّحِيم’ — তিনি ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু:
আয়াতের শেষাংশ আবার আল্লাহর দুটি গুণনামের মাধ্যমে শেষ হয়েছে—ঘন ঘন ক্ষমা করা ও সীমাহীন দয়া করা। যা আয়াতের বার্তাকে আরও দৃঢ় করে।

🕋 এই আয়াতের প্রভাব

একজন হতাশ পাপীও যেন জানে, তার জন্যও আল্লাহর দরজা খোলা।

এটি ইসলামের আশাবাদী দৃষ্টিভঙ্গির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

এই আয়াত অনেককে আত্মহত্যা, চরম হতাশা বা আল্লাহর রহমত থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া থেকে রক্ষা করেছে।

📌 বাস্তব জীবনে প্রয়োগ:

পাপ করে ফেললে হতাশ না হয়ে আল্লাহর কাছে ফিরে আসা।

কাউকে তার পাপের কারণে ঘৃণা না করা, বরং আল্লাহর রহমতের কথা মনে করিয়ে দেয়া।

নিজেকে গোনাহগার ভেবে আল্লাহর দরজায় খাঁটি তাওবার সাথে ফিরে যাওয়া।

একটি বিমানের যাত্রা—আর একটি বিমানের ট্র্যাজেডি

২০২৪ সালের ১১ই অক্টোবর, সিঙ্গাপুরে একটি কনফারেন্স শেষ করে মালয়েশিয়ার উদ্দেশ্যে যাত্রা করার জন্য চাঙ্গি বিমানবন্দরে পৌঁছাই। দুপুর প্রায় ১টার দিকে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে আমাদের অনবোর্ড করানো হয়। সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্স বিশ্বের অন্যতম সেরা এয়ারলাইন্সগুলোর একটি হওয়া সত্ত্বেও, বিমানের অভ্যন্তরে প্রবেশের পরেই মনটা একটু খচখচ করতে লাগল। কেননা, ভেতরের পরিবেশটা আমাদের ঢাকা শহরের কোনো লোকাল বাস—যেমন ‘ছয় নম্বর’ বাসে ওঠার অনুভূতির মতো মনে হলো।

আমি সিটে বসে সিটের ডিসপ্লেতে ক্লিক করছিলাম, কিন্তু সেটা ঠিকভাবে কাজ করছিল না। এসি-ও যেন কেমন অদ্ভুতভাবে চলছিল। যেহেতু আমার জানালার পাশের সিট ছিল, তাই বাইরে উঁকি দিতেই দেখতে পেলাম কয়েকজন ব্যক্তি নিচে দাঁড়িয়ে বিমানের তলদেশে কী যেন পর্যবেক্ষণ করছেন। তখনো কিছু বুঝে উঠতে পারিনি।

প্রায় ৩০ থেকে ৪০ মিনিট পর পাইলট ঘোষণা দিলেন যে, বিমানে যান্ত্রিক ত্রুটি পাওয়া গেছে। তাই সকল যাত্রীকে বিমান থেকে নেমে আবার বোর্ডিং গেটে ফিরে যেতে হবে। দীর্ঘ দুই-আড়াই ঘণ্টা অপেক্ষার পর আরেকটি নতুন বিমান এসে আমাদেরকে গন্তব্য মালয়েশিয়ায় পৌঁছে দেয়।

১২ই জুন ২০২৫ তারিখে ঘটে যায় এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। এয়ার ইন্ডিয়ার লন্ডনগামী একটি বোয়িং ৭৮৭ বিমান আহমেদাবাদ থেকে উড্ডয়নের মাত্র ৫ মিনিট পর বিধ্বস্ত হয়। বিমানটিতে ২৪২ জন যাত্রী ছিলেন, যার মধ্যে ২৪১ জনই নিহত হন—মাত্র একজন ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান।

এই বোয়িং ৭৮৭ মডেলটি আধুনিক প্রযুক্তির একটি প্রতিনিধিত্বকারী বিমান বলে ধরা হয়। তাহলে কীভাবে এমন ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটল? একজন বিমান বিশেষজ্ঞের মতে, বিমানের ল্যান্ডিং গিয়ার ঠিকভাবে বন্ধ হয়নি এবং ফ্ল্যাপও কাজ করছিল না। এটি হয়তো যান্ত্রিক ত্রুটি বা পাইলটের ভুলের ফল হতে পারে।

অনেক যাত্রী ফ্লাইট ছাড়ার আগেই সোশ্যাল মিডিয়ায় বিমানের বিভিন্ন সমস্যার কথা জানিয়েছিলেন—যেমন ডিসপ্লে কাজ করছিল না, এসি সঠিকভাবে চলছিল না ইত্যাদি। অথচ এসব সমস্যাকে গুরুত্ব না দিয়ে বিমানটি উড্ডয়ন করানো হয়েছিল।

এ ধরনের দুর্ঘটনাগুলো আরও ভাবিয়ে তোলে কারণ অনেক বাজেট এয়ারলাইন্স উচ্চমূল্যের নতুন বিমান কেনার পরিবর্তে ১৫ থেকে ২০ বছরের পুরোনো বিমান পরিচালনা করে থাকে। যদিও সিঙ্গাপুর থেকে মালয়েশিয়া যাওয়া ফ্লাইটগুলোকে সাধারণত লোকাল ট্রিপ হিসেবে ধরা হয়, তবুও সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্স যান্ত্রিক ত্রুটি পেলে সম্পূর্ণ দায়িত্বশীলতা দেখিয়ে ফ্লাইট বাতিল করে। কিন্তু এয়ার ইন্ডিয়ার মতো আন্তর্জাতিক ফ্লাইটে এমন অবহেলা সত্যিই অবাক করার মতো।

সবচেয়ে হৃদয়বিদারক বিষয় ছিল—প্রতীক যোশী ও তার স্ত্রী-সন্তানের শেষ সেলফি। একটি পরিবারের সকল সদস্য একসাথে জীবন হারাল—এক মুহূর্তেই একটি গোটা পরিবারের গল্প শেষ হয়ে গেল। শুধু প্রতীকের পরিবার নয়, আরও অনেক পরিবার এভাবে চিরতরে ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে।

আসলে জীবনের চেয়ে পয়সার দাম কখনোই বেশি নয়। কিন্তু কঠিন বাস্তবতায় আমরা অনেক সময় বাধ্য হয়ে জীবনের ঝুঁকির সঙ্গে পয়সার সমঝোতা করে ফেলি।

আল্লাহ আমাদের সবাইকে রক্ষা করুন। আমীন।