২০২৪ সালের ১১ই অক্টোবর, সিঙ্গাপুরে একটি কনফারেন্স শেষ করে মালয়েশিয়ার উদ্দেশ্যে যাত্রা করার জন্য চাঙ্গি বিমানবন্দরে পৌঁছাই। দুপুর প্রায় ১টার দিকে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে আমাদের অনবোর্ড করানো হয়। সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্স বিশ্বের অন্যতম সেরা এয়ারলাইন্সগুলোর একটি হওয়া সত্ত্বেও, বিমানের অভ্যন্তরে প্রবেশের পরেই মনটা একটু খচখচ করতে লাগল। কেননা, ভেতরের পরিবেশটা আমাদের ঢাকা শহরের কোনো লোকাল বাস—যেমন ‘ছয় নম্বর’ বাসে ওঠার অনুভূতির মতো মনে হলো।
আমি সিটে বসে সিটের ডিসপ্লেতে ক্লিক করছিলাম, কিন্তু সেটা ঠিকভাবে কাজ করছিল না। এসি-ও যেন কেমন অদ্ভুতভাবে চলছিল। যেহেতু আমার জানালার পাশের সিট ছিল, তাই বাইরে উঁকি দিতেই দেখতে পেলাম কয়েকজন ব্যক্তি নিচে দাঁড়িয়ে বিমানের তলদেশে কী যেন পর্যবেক্ষণ করছেন। তখনো কিছু বুঝে উঠতে পারিনি।
প্রায় ৩০ থেকে ৪০ মিনিট পর পাইলট ঘোষণা দিলেন যে, বিমানে যান্ত্রিক ত্রুটি পাওয়া গেছে। তাই সকল যাত্রীকে বিমান থেকে নেমে আবার বোর্ডিং গেটে ফিরে যেতে হবে। দীর্ঘ দুই-আড়াই ঘণ্টা অপেক্ষার পর আরেকটি নতুন বিমান এসে আমাদেরকে গন্তব্য মালয়েশিয়ায় পৌঁছে দেয়।
১২ই জুন ২০২৫ তারিখে ঘটে যায় এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। এয়ার ইন্ডিয়ার লন্ডনগামী একটি বোয়িং ৭৮৭ বিমান আহমেদাবাদ থেকে উড্ডয়নের মাত্র ৫ মিনিট পর বিধ্বস্ত হয়। বিমানটিতে ২৪২ জন যাত্রী ছিলেন, যার মধ্যে ২৪১ জনই নিহত হন—মাত্র একজন ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান।
এই বোয়িং ৭৮৭ মডেলটি আধুনিক প্রযুক্তির একটি প্রতিনিধিত্বকারী বিমান বলে ধরা হয়। তাহলে কীভাবে এমন ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটল? একজন বিমান বিশেষজ্ঞের মতে, বিমানের ল্যান্ডিং গিয়ার ঠিকভাবে বন্ধ হয়নি এবং ফ্ল্যাপও কাজ করছিল না। এটি হয়তো যান্ত্রিক ত্রুটি বা পাইলটের ভুলের ফল হতে পারে।
অনেক যাত্রী ফ্লাইট ছাড়ার আগেই সোশ্যাল মিডিয়ায় বিমানের বিভিন্ন সমস্যার কথা জানিয়েছিলেন—যেমন ডিসপ্লে কাজ করছিল না, এসি সঠিকভাবে চলছিল না ইত্যাদি। অথচ এসব সমস্যাকে গুরুত্ব না দিয়ে বিমানটি উড্ডয়ন করানো হয়েছিল।
এ ধরনের দুর্ঘটনাগুলো আরও ভাবিয়ে তোলে কারণ অনেক বাজেট এয়ারলাইন্স উচ্চমূল্যের নতুন বিমান কেনার পরিবর্তে ১৫ থেকে ২০ বছরের পুরোনো বিমান পরিচালনা করে থাকে। যদিও সিঙ্গাপুর থেকে মালয়েশিয়া যাওয়া ফ্লাইটগুলোকে সাধারণত লোকাল ট্রিপ হিসেবে ধরা হয়, তবুও সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্স যান্ত্রিক ত্রুটি পেলে সম্পূর্ণ দায়িত্বশীলতা দেখিয়ে ফ্লাইট বাতিল করে। কিন্তু এয়ার ইন্ডিয়ার মতো আন্তর্জাতিক ফ্লাইটে এমন অবহেলা সত্যিই অবাক করার মতো।
সবচেয়ে হৃদয়বিদারক বিষয় ছিল—প্রতীক যোশী ও তার স্ত্রী-সন্তানের শেষ সেলফি। একটি পরিবারের সকল সদস্য একসাথে জীবন হারাল—এক মুহূর্তেই একটি গোটা পরিবারের গল্প শেষ হয়ে গেল। শুধু প্রতীকের পরিবার নয়, আরও অনেক পরিবার এভাবে চিরতরে ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে।
আসলে জীবনের চেয়ে পয়সার দাম কখনোই বেশি নয়। কিন্তু কঠিন বাস্তবতায় আমরা অনেক সময় বাধ্য হয়ে জীবনের ঝুঁকির সঙ্গে পয়সার সমঝোতা করে ফেলি।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে রক্ষা করুন। আমীন।
No comments:
Post a Comment